নির্বাচনে পরাজিতরাই অপপ্রচারের মূল হোতা

সোয়েব সাঈদ ,রামু  :

কক্সবাজরের রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের নামে দূর্নীতির ভিত্তিহীন তথ্য ও অপপ্রচার চালানো হয়েছে এমন দাবি করে পাল্টা সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের সর্বস্তুরের জনগনের ব্যানারে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) বিকাল পাঁচটায় রামু প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদকে জড়িয়ে আগেরদিন ১০ এপ্রিল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন সম্পর্কে চেয়ারম্যানের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন, কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য আজিজুল হক।

লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মোস্তাক আহমদ বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছিলেন। তার প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থীরা ছিলেন সকলেই তার বয়সে বড়। নির্বাচনে পরাজয়ের জের ধরে ওইসব প্রার্থীরা মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে এলাকার কতিপয় সুবিধাভোগী নেতা এবং সহজ সরল জনপ্রতিনিধিদের কৌশলে বশে এসে পরিকল্পিত এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেছে। সংবাদ সম্মেলনের নামে চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অপপ্রচার চালানো হয়েছে। যা পূর্ব পরিকল্পিত, সাজানো এবং চরম মানহানিকর। সংবাদ সম্মেলনে মোস্তাক আহমদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোন ভিত্তি নেই।

সংবাদ সম্মেলনে কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চলতি মেয়াদে ভিজিডি উপকারভোগীদের কাছ থেকে আড়াই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, অথচ এ কর্মসূচির ১৮১ জন উপকারভোগীর কার্ড প্রত্যেক ইউপি সদস্যদের ভাগ করে দেয়া হয়েছিলো। একারনে এতে অনিয়মের বিষয়টি ভিত্তিহীন। হস্তান্তরিত সম্পত্তির ৪ লক্ষ ৪ হাজার ৩৯০ টাকা আত্মসাৎ এর কথা বলা হয়েছে। অথচ এ অর্থ দিয়ে পরিষদ ভবন, আসবাবপত্র, গ্রিল ও পরিষদের রংয়ের কাজ এবং চেয়ারম্যান-মেম্বারদের জন্য বসার চেয়ার ও পর্দা ক্রয়, পরিষদে নতুন মিটার স্থাপনসহ বিদ্যুতায়ন, ইউপি সচিবের বাথরুম নির্মাণ করা হয়েছে।

বাজার নিলামের ১ লক্ষ ৮০ হাজার ৩৩৩ টাকার প্রকল্পে দূর্নীতির অভিযোগটি হাস্যকর। কারণ এ প্রকল্প এখন অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলেও এখনো কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। তাই এতে দূর্নীতির প্রশ্নই আসে না। টিআর/কাবিখা প্রকল্পের আওতায় উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে দশটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে সৌর প্যানেল দেয়া হয়েছে। এছাড়া চারটি সড়কে মাটির কাজ করা হয়েছে। এরমধ্যে তিনটি সড়কের কাজ করেছেন মেম্বার বদরুল হুদা, আবদুল মালেক ও আনার কলি। এসব কাজের বিল এখনো ছাড় হয়নি।

২০১৫-১৬ অর্থ বছরের এলজিএসপি-২ এর ১৫ লক্ষ ৩২ হাজার মধ্যে সেলাই মেশিন বাবদ ৮৫ হাজার টাকা ও গভীর নলকূপ বাবদ ৮৭ হাজার টাকাসহ ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা ইউনিয়ন পরিষদের মহল্লাদার আবদুল মন্নানকে কোটেশন দাতা দেখিয়ে নিজেই উত্তোলন করে নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ মনগড়া। কারন এ প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১৩টি গ্রামীন সড়ক নির্মাণ, ১০টি সেলাই মেশিন বিতরণ করা হয়েছে। যাহা ইউপি সদস্য নিয়ে সভা করে সদস্যদের মাধ্যমেই করা হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মইশকুম পাহাড়ে ও ৯নং ওয়ার্ডের গোলাইর ঘোনা এলাকায় দুটি টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়নের হোল্ডিং নাম্বার প্লেট বিতরণে টাকা আত্মসাৎ, গ্রাম আদালতের বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে তিন’শ টাকা ননজুডিসিয়াল অলিখিত স্ট্যাম্পে দস্তখত নিয়েও দীর্ঘ দিনে বিচার কাজ শেষ না করা, জন্ম সনদে দেড় হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা, ওয়ারিশ সনদ, ভূমিহীন সনদ, মৃত্যু সনদ ও প্রত্যয়ন পত্রে ২শ থেকে ৫ শত টাকা করে আদায় করার যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো।

উল্লেখ্য কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের উল্লেখিত সকল প্রকল্প, সরকারি কর্মকান্ড সকল ইউপি সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের সাথে সভা করে রেজুলেশন করা হয়েছিলো। ফলে এসব নিয়ে যারা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন তারাই তো সেখানে স্বাক্ষী হয়ে আছেন। তাই অহেতুক পরাজিত পক্ষের ইন্ধনে এসব বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি করাটা মোটেই শোভনীয় নয়।

বরং আমরা কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের সর্বস্তুরের জনতার পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাই উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার ও বিরোধিতা না করে আসুন সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটি দূর্নীতিমুক্ত, সুন্দর ইউনিয়ন হিসেবে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের সুনাম অক্ষুন্ন রাখি। এতে সাংবাদিকবৃন্দের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং বিভ্রান্তিমূলক কথিত সংবাদ সম্মেলন নিয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানানো হয়।

সম্মেলনে কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ বলেন, আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তার কোনটিই সত্য নয়। এসময় চেয়ারম্যান বিভিন্ন প্রকল্পের রেজুলেশন সাংবাদিকদের দেখান।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, পরিষদের ১% এর টাকা কয়েকজন মেম্বার ভাগভাটোয়ারা করার প্রস্তাব দিয়ে ছিলো। তা না পাওয়ায় তারা ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে হাত মিলিয়ে অপ-প্রচার চালাচ্ছে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাধারন সম্পাদক মনজুর আলম সোহেল বলেন, বিগত ৪৫ বছর ধরে কাউয়ারখোপবাসী ৩টি প্রভাবশালী পরিবারের কাছে জিম্মি ছিলো। নির্বাচনে সাধারণ পরিবার থেকে বেড়ে ওঠা মোস্তাক আহমদ বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় পরাজিতরা শুরু থেকেই যড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তিনি পরাজিত প্রার্থী নুরুল হক, শফিউল আলম, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ ও ছাত্রলীগের ওবাইদুল হকসহ বেশ কয়েক জনকে ষড়যন্ত্রকারীর মূল হোতা বলে উল্লেখ করেন।

সম্মেলনে কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের সচেতন জনসাধারণের পক্ষে কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল মালেক, আজিজুল হক, কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি তারেক আহমদ, কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা আবদু ছালাম, আলী আহমদ, মো. আলী, মো. নুরুল আলম, আবদুর রাজ্জাক ভূট্টো, সেলিম উল্লাহ, কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক মনজুর আলম সোহেল, কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন শ্রমিকলীগ নেতা ওমর ফারুক সৈকত, উখিয়ারঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি নুরুল ইসলাম, কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন তাঁতীলীগের সভাপতি ফয়েজ আহমদ, কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার কামাল বাদল, কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা আবদুল হাকিম হিমেলসহ শতাধিক জনতা উপস্থিত ছিলেন।